জীববিজ্ঞানের চোখে ‘পানি’,,,,
দুইটি হাইড্রজেন এবং একটি অক্সিজেন পরমাণুর সমযোজী বন্ধনে গঠিত হয় H2O বা পানি । তবে রসায়ন নয়, আজ লিখছি জীববিজ্ঞানে পানির গুরুত্ব নিয়ে ।
ছোটবেলা থেকে সবাই জেনে আসছি জলের অপর নাম জীবন । কিন্তু কিভাবে পানি হয়ে উঠল, “Fluid of life”?
আমরা যেসব জিনিস ছাড়া বাঁচব না এমন জিনিসের তালিকার শীর্ষস্থানীয় অক্সিজেনের পড়েই পানির স্থান ।
জীববিজ্ঞানে পানি সবখানে ছড়িয়ে আছে । জীবনের জন্য অতীব জরুরি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া, যেখানে মূলত কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে পানির বিক্রিয়া ঘটিয়ে গ্লুকোজ ও অক্সিজেন উৎপন্ন হয় ।
তাহলে পরোক্ষভাবে নয় বরং প্রত্যক্ষভাবেই আমরা পানি ছাড়া অক্সিজেনের কথা ভাবতে পারি না ।
মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবী উৎপত্তির সময় পৃথিবীতে অক্সিজেন গ্যাসের কোন উপস্থিতিই ছিল না । প্রাথমিক ভাবে জীবনের সূচনা হয় সমুদ্রের পানিতে এবং আদি সামুদ্রিক উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই পৃথিবীতে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ বাড়তে থাকে যা কিনা বর্তমানে বায়ুমন্ডলের 20.95%! অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকার কথা ভাবা যায় না ।
সুতরাং খাদ্য ও শ্বাস নিতে আমার কিভাবে পানির উপর নির্ভরশীল তা জানা হলো । এবারে আসি পান করার জন্য পানির গুরুত্বে । আমাদের দৈহিক ওজনের 50%-65% পানি, রক্তরসের
প্রায় 91-92% পানি আবার জীবদেহের ভৌত ভিত্তি প্রটোপ্লাজমের শতকরা 90 ভাগই পানি । সুতরাং পানি পান করে শরীরের পানি চাহিদা মেটানো না হলে মৃত্যু হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় ।
তবে পান করা পানির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মূত্র ও ঘামের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করা ।
এখন আসি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পানির গুরুত্বে । সালোকসংশ্লেষণে পানির গুরুত্ব নিয়ে আগেই আলোচনা করেছি তাই এখন জানব উদ্ভিদে পরিবহনে পানির গুরুত্ব নিয়ে । উদ্ভিদ তার বৃদ্ধি ও পরিপুষ্টির জন্য মাটি, বায়ু এবং পানি থেকে কতগুলো উপাদান গ্রহণ করে ।
এ উপাদানগুলোর অভাবে উদ্ভিদ সুষ্ঠুভাবে বাঁচতে পারে না । এ উপাদান গুলোকে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান বলে । এ সকল পুষ্টি উপাদানের অধিকাংশই উদ্ভিদ মাটি থেকে সংগ্রহ করে বলে এদেরকে খনিজ পুষ্টি বলা হয়। উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে কার্বন এবং অক্সিজেন বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রহণ করে ।
হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন পানি থেকে গ্রহণ করে । অন্যসব উপাদান মাটি থেকে মূলের সাহায্যে শোষণ করে । এই উপাদান গুলো মাটিতে বিভিন্ন লবণ হিসেবে থাকে ।
কিন্তু উদ্ভিদ এগুলোকে লবণ হিসেবে সরাসরি শোষণ করতে পারে না, আয়ন হিসেবে শোষণ করে । অধিকাংশ উদ্ভিদ পানির সাথে কিছু পরিমাণ খনিজ লবণ শোষণ করে কিছু লবণ মূল রং দিয়ে শোষিত হলেও মূলত মূলের অগ্রভাগের কোষ বিভাজন অঞ্চলই শোষণ অঞ্চল হিসেবে কাজ করে ।
শোষণ প্রধানত দুটি উপায়ে হয়ে থাকে, নিষ্ক্রিয় শোষণ ও সক্রিয় শোষণ । নিষ্ক্রিয় শোষণ প্রক্রিয়ায় মূলরোম ইমবাইবিশন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় লবণ শোষণ করে, কোন বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন হয় না ।
অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ মাটি থেকে মূল দিয়ে পানি শোষণ করে । কোষের ভিতর কার পানি এবং পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ কে একত্রে কোষরস বলে ।
পানি শোষণের চেয়ে প্রস্বেদনে পানি হারানোর হার বেশি হলে উদ্ভিদের জন্য পানি এবং খনিজের ঘাটতি দেখা দিবে । এর ফলে উদ্ভিদের মৃত্যু হতে পারে ।
সুতরাং পানি ছাড়া জীবনকে কল্পনা করা যায় না ।
পানির এত গুরুত্ব থাকার পরেও আমরা নির্দ্বিধায় পানিকে দূষিত করে যাচ্ছি যা জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ । তাই পানির গুরুত্ব বুঝে পানি দূষণ রোধ করা আমাদের কর্তব্য ।