রোমান্টিক ছোট গল্প -০১

গল্পের নামঃ মহাকালের দেয়াল(১ম পর্ব)

শরতের বিকেল।ঘড়িতে বাজে ৫টা ৪০।চারিদিকে মৃদু ঠান্ডা বাতাস,আকাশে সাদা মেঘের ভেলা,শাড়ি-পাঞ্জাবী পরে আসা একঢল রমনী ও সুদর্শন যুবকদের ভীড়।

সবমিলিয়ে টিএসসি চত্ত্বরের প্রকৃতি এখন এক মায়াবী রূপ ধারণ করেছে।এদের মধ্যেই সাদা-লাল কম্বিনেশনের একটা চমৎকার শাড়ি পরে আসা একটা মেয়েকে দেখা গেলো।মেয়েটার নাম সুহাসিনী সরকার মিথেন।তার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

তাই খুব শখ করে মেয়ের নাম রেখেছিলেন সুহাসিনী। আর তার বাবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভেগের অধ্যাপক।সুহাসিনী তার প্রথম ও একমাত্র মেয়ে হওয়ার কারণে তার নাম রেখে দেন মিথেন।মা তাকে আদর করে ডাকেন সুহা,আর বাবা আদর করে ডাকেন মিথি।

তার হবু স্বামী রিফাত কে ফোন দিচ্ছে।কিন্তু রিফাত ফোন ধরছে না।রিফাত অবশ্য সবসময়ই এমন করে।তাকে কিছুটা অবহেলা করে।তাদের সম্পর্কের আজ ৬ বছর।কিছুদিন আগেই তারা দুজনে নিজেদের বাসায় নিজেদের সম্পর্কের কথা বলেছে এবং দুই পরিবারই বিয়েতে সম্মতি জানায়।

 

আগামী মাসের ২৩তারিখ তাদের বিয়ে।অবশ্য,ক্লাস নাইনে থাকা অবস্থাতেই সুহা রিফাতের প্রেমে পরে।তাদের স্কুলের কলেজ শাখায় তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো রিফাত।তবে,ক্লাস নাইনে প্রেমে পড়লেও সেটা সুহা রিফাত কে জানায় তার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর।

 

রিফাতের সাথে ফেসবুকে অনেক আগে থেকেই এড থাকায়,এই কথা জানাতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি সুহাকে।রিফাত কিছুটা সময় চায় এবং পরে তারা একটা সম্পর্কে চলে যায়।তবে রিফাত সবসময় নিজেকে বড় আর সুহাকে ছোট করে দেখে;কথা আর কাজে তাই বোঝানোর চেষ্টা করে।

তবে সুহা এতে কিছু মনে করেনা।সে তার ভালোবাসাকে হারাতে চায় না।রিফাত এখন একটা প্রাইভেট ফার্মে খুব ভালো একটা চাকরি করে।তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি,গাড়ি আর যা একজন বিলাসবহুল মানুষের প্রয়োজন হয় সেসব কিছু।সুহা আবারো ফোন দিলো,রিং হচ্ছে কিন্তু কল রিসিভ করছেনা।

এই নিয়ে ৬বার কল দিলো সুহা,কিন্তু রিফাতের কাছ থেকে একটা মেসেজ পর্যন্ত আসেনি।এখন ৬টা বাজে,অথচ রিফাতের এখানে থাকার কথা ৫টা বাজে।সুহা এবার সিদ্ধান্ত নিলো,সে চলে যাবে।আসার সময় তার মন খানিকটা খারাপ।৬টা বছর হলো সম্পর্কের,এখনো তার প্রিয় মানুষ তাকে কেনো অবহেলা করে সেটা তার জানা নেই।

সে কয়েক কদম চলার পর তার কানে একটা সুর বেজে উঠলো। কে যেনো একটা একুস্টিক খুব ভালো করে বাজাচ্ছে।আর এই সুরটা এর আগে সে কখনো শুনেনাই।অনেক ইউনিক।সাধারণত সুহার যখন মন খারাপ থাকে তখন সে কোনো গান শুনেনা,কারো সংস্পর্শে থাকেনা,তখন সে একা থাকতে চায়।

একাই সে নিজের দুঃখ নিয়ে বড় বড় অট্টালিকার সমান দুঃখবিলাস বানায়।কিন্তু আজ তার এই সুরটা শুনে অনেক ভালো লাগছে।সে সুরের শব্দটা কোথা থেকে আসছে সেটা দেখার জন্যে এগিয়ে গেলো।এগিয়ে গিয়ে দেখলো একটা লাল রঙের পাঞ্জাবী পরে একটা ছেলে একুস্টিক বাজাচ্ছে।

ছেলেটার চেহারার রঙ শ্যামল বর্ণের,চুল গুলো কাধ পর্যন্ত লম্বা,চোখ গুলো মাঝারি ধরনের,হালকা দাড়ি,হালকা গোফ,মুখে মুচকি হাসি।সুহার সুর গুলো শুনে মনে হচ্ছে এতো সুন্দর গানের সুর সে কখনো শুনেনি।সে কিছুটা দুরত্ব রেখে ছেলেটার পাশে বসলো।

ছেলেটা বাজাচ্ছে,আর সে মনোযোগ দিয়ে শুনছে।ছেলেটা এবার গাওয়া শুরু করলোঃ
“এই আলো ধরে রাখো কুঠুরি।
আমাকে আর খুঁজো না!
আমি থাকবো নিভে যাওয়া প্রদীপের আধারে…
এই গান শুনে রাখো বালুতীর।

আমাকে আর ডেকো না!
আমি চলে যাবো চিলের ডানায় গভীর সাগরে…
মানুষের হৃদয় ভরে ওঠে আবার শূন্য হওয়ার জন্য।
বিস্তৃতির এই ফুলেল বাগানে ঝরা ফুলে মধু খুঁজে ভ্রমর হয় ধন্য…”
গান গাওয়া শেষে ছেলেটি সুহার দিকে তাকালো।সুহা বললো,”আমি সুহা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বোটানি বিষয়ে পড়ছি।আপনার সাথে কি পরিচিত হতে পারি?”ছেলেটি এক দৃষ্টিতে সুহার দিকেই তাকিয়ে আছে।দুটি ডাগর ডাগর মায়াবী চোখ,মাথায় একগোছা চুল,কানে দুল।তার চোখ থেকে এতোটাই মায়া নিঃসৃত হচ্ছে যে পরিবেশের অন্যান্য উপাদান কারো চোখে পরার সম্ভাবনাই নেই।

হাজারো চেষ্টা করেও ছেলেটি তার চোখ সুহার চোখ থেকে সরাতে পারছেনা।সুহাও বুঝতে পারছেনা কেনো ছেলেটি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকেই চেয়ে আছে।সুহা বলে উঠলো,”এইযে স্যার!আপনাকেই বলছি।”এবার ছেলেটি কিছুটা লজ্জা পেলো,বলে উঠলো,”আমি সৌরভ।পড়ালেখা শেষ করেছি গতবছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

মনোবিজ্ঞান বিষয়ে।এখন বাবার ব্যবসা পরিচালনা করি।” “তা অমন হা করে কি দেখছিলেন আমার চোখের দিকে?”,সুহা জিজ্ঞেস করলো।সৌরভ বললো,”কখনো এতো সুন্দর দেবী দেখার সুযোগ হয়নি তো তাই!”এবার সুহা কিছুটা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললো,”কি যে বলেন না!আমি একটুও সুন্দর না।কালো একটা মেয়ে।

যাক গে সেসব।তা খুব ভালো গান করেন দেখছি।আপনার উনিকে দেখছিনা যে?সে কোথায়?”এবার সৌরভ হা হা করে হেসে দিলো।সুহার মনে হলো এরকম প্রাণবন্ত হাসি সে শেষ কবে দেখেছে তার মনে নেই।সৌরভ এবার হাসি থামিয়ে বললো,”আমার কোনো উনি নেই। আমার চিন্তাভাবনা একটু ব্যাকডেটেড তো,তাই তেমন কোনো মেয়ে আমাকে পছন্দ করেনা।

আর কে বলেছে মোনালিসা সুন্দর আর আপনি সুন্দর না?হ্যা,এটা অভিজাত ব্যবসায়ী আর তাদের চ্যালাপেলারা আপনাকে বলবে।কারণ এসব কথা বলে তারা আপনাকে হীনমন্য করতে চায় আর আপনার এই হীনমন্যতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করতে চায়!

স্রষ্টার সব সৃষ্টিই সুন্দর।সৌন্দর্যকে শুধু এই শর্তে মেনে নিতে রাজি আছি।আর বিশ্বাস করেন আপনার মতো মায়াবতী আমি এর আগে কখনো দেখিনি!”

Leave a Comment