এফিলিয়েট মার্কেটিং বাংলা গাইডলাইন ২০২২

Contents

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

কিছু কমিশনের বিনিময়ে অন্যের পন্য বিক্রি করে দেওয়ার পদ্ধতিকে এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্লগারদের পছন্দের ইনকাম সোর্স এফিলিয়েট মার্কেটিং।

তাছাড়া সেল বাড়াতে এটি অনেক সাহায্য করে। এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে চার শ্রেণীর ব্যক্তি থাকে। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।

১. এফিলিয়েট: এরা পাবলিশার নামেও পরিচিত। অর্থাৎ যেসব ব্যক্তি কমিশনের বিনিময়ে পন্য বিক্রি করতে সাহায্য করে তাদের এফিলিয়েট বা পাবলিশার্স বলে।

২. নেটওয়ার্ক: পাবলিশার এবং মার্চেন্টের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী হলো নেটওয়ার্ক। বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে।

৩. মার্চেন্ট: পন্য বা সেবার মালিক হলো মার্চেন্ট। অর্থাৎ একজন এফিলিয়েট যার পন্য বিক্রি করতে সাহায্য করে তাকে মার্চেন্ট বলে।

৪. কাস্টমার বা ক্রেতা: যারা পন্য বা সেবা ক্রয় করে তাদের কাস্টমার বলে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রথমে মার্চেন্ট একটি পন্য সেবা প্রকাশ করে। এরপর মার্চেন্ট একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন সেট করে রাখে যা একজন পাবলিশার বিক্রি করতে পারলে পাবে।

আরোও পড়ুন: রিসেলার হোস্টিং কি ? রিসেলার হোস্টিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা

একজন কাস্টমার যদি উক্ত পন্যটি ক্রয় করে তাহলে পাবলিশার সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবে। নিজের প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি আরোও পরিষ্কার করা হলো।

এফিলিয়েট মার্কেটিং ডায়াগ্রাম

কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবসাকে সমৃদ্ধ করে?

যদি আপনি ভালো মানের কমিশন দেন তাহলে অনেকে আপনার পন্যের এফিলিয়েট মার্কেটিং করবে। এক্ষেত্রে আপনি কিছু কমিশন দিয়ে ফ্রিতে প্রচার করতে পারবেন।

আপনার লাভ কম হলেই পন্য বা সেবা প্রচু মানুষের কাছে পৌঁছাবে। তবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করলে কম লাভ এমন কিন্তু নয়। ধরুন আপনার একটি পন্যের মূল্য ১০০০ টাকা এবং বিক্রি করতে পারলে আপনার লাভ হবে ১৫০ টাকা।

এখন আপনি উক্ত পন্যের উপর ৫% কমিশন নির্ধারণ করলেন। অর্থাৎ উক্ত পন্যটি কেও এফিলিয়েট মার্কেটিং করে বিক্রি করতে পারলে ৫০ টাকা পাবে। তাহলে এখনো আপনার ১০০ টাকা লাভ থাকছে।

আবার আপনি লাভ পাওয়ার সাথে সাথে কোম্পানির প্রচার ফ্রিতে পেয়ে যাচ্ছেন। অতএব এফিলিয়েট মার্কেটিং করলে কম লাভ হলেও আপনার পন্য বা কোম্পানির বহুল প্রচার হবে। যার ফলে কোম্পানির মার্কেট ভ্যালু বৃদ্ধি পাবে।

কিভাবে এফিলিয়েট কমিশন দেওয়া হয়?

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে কমিশন দেওয়া হয়। নিচে প্রধান প্রধান কমিশন সিস্টেম গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

PPS (Pay per sell): বর্তমানে সাধারণত এই পদ্ধতি অনুসরন করে এফিলিয়েট মার্কেটারদের কমিশন দেওয়া হয়। PPS এর ক্ষেত্রে একটি পন্য বিক্রি করতে পারলে তারপর কমিশন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কমিশনের পরিমাণ একটু বেশি থাকে।

PPA (Pay per action): এক্ষেত্রে কোনো অডিয়েন্স যদি ফ্রি ট্রায়াল, ইমেইল নিউজলেটার, রিভিউ ইত্যাদি করে তাহলে তার জন্য কমিশন দেওয়া হয়। এটি কিছুটা সহজ হওয়ায় কমিশন কম দেওয়া হয়।

PPC (Pay per click): এই সিস্টেমের ক্ষেত্রে প্রতিটা ক্লিকের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেওয়া হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক এই সিস্টেম ব্যবহার করে। নতুনদের ক্ষেত্রে এটি অনেক সহজ এবং আয় অনেক ভালো হয়।

কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবো?

আপনি যদি একজন ব্লগার, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর অথবা ইউটিউবার হয়ে থাকেন তাহলে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আপনি আয় করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর ভিজিটর।

তবে আপনার ভিজিটর থাকলেও এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলো কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আমরা এই অংশে সেটি নিয়েই আলোচনা করবো।

নিম্নে বর্ণিত অংশে কয়েকটি ধাপ দেওয়া হলো যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি একজন সফল এফিলিয়েট মার্কেটার হতে পারবেন।

১. টপিক নির্বাচন

এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে টপিক নির্বাচন অনেক গুরুত্বপুর্ন। কারন আপনি যে টপিক নিয়ে কন্টেন্ট তৈরী করবেন সেই টপিকের উপর এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হবে।

অন্যথায় আপনি খুব একটা সফল হতে পারবেন না। যেমন আপনি যদি মোবাইল ফোন নিয়ে কন্টেন্ট তৈরী করেন এবং সেখানে স্বাস্থ্য বিষয়ক পন্য সেল করতে যান তাহলে খুব একটা মানুষ কিনবে না।

অতএব টপিক নির্বাচন অনেক গুরুত্বপুর্ন। আপনি যে বিষয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান সেই বিষয়ের উপর কন্টেন্ট লিখতে হবে।

২. ওয়েবসাইট তৈরী

আপনি যদি ভালো ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান তাহলে ওয়েবসাইট সবথেকে বেশি কার্যকরী হবে। তাছাড়া ব্লগিং করতে হলে অবশ্যই একটি ওয়েবসাইট থাকতে হবে।

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি কন্টেন্ট লেখার পাশাপাশি সুন্দর ডিজাইনের এফিলিয়েট বিজ্ঞাপন, লিংক, ব্যান্যার ইত্যাদি তৈরী করতে পারবেন যা আপনাকে বাড়তি সুবিধা দেবে।

ওয়েবসাইট তৈরী করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং গাইডলাইন আমার হোস্টারে পেয়ে যাবেন। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন এবং তারপর লাইভ চ্যাটে যোগাযোগ করুন।

৩. এফিলিয়েট প্রোগ্রাম নির্বাচন

একটি বিশ্বস্ত এবং বেশি কমিশন দেয় এরকম এফিলিয়েট প্রোগ্রাম আপনাকে খুজতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার কন্টেন্টের সাথে মিলে যায় এমন এফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুজতে হবে। আমরা সবথেকে সেরা মানের তিনটি এফিলিয়েট প্রোগ্রাম নির্বাচন করেছি। সেগুলো নিচে দেওয়া হলো:

ক. আমার হোস্টার এফিলিয়েট প্রোগ্রাম

আমার হোস্টার একটি ডোমেইন, হোস্টিং এবং সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি। আমার হোস্টারে আপনি এফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে সাইন আপ করলে ৫০ টাকা বোনাস পাবেন এবং প্রতিটি পন্যের উপর ৩০% পর্যন্ত কমিশন পাবেন। ৫০০ টাকা হলে আপনি বিকাশ, রকেট এবং নগদের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন।

খ. দারাজ এফিলিয়েট প্রোগ্রাম

বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ই-কমার্স ওয়েবসাইট হলো দারাজ। আপনার টপিক অনুযায়ী দারাজে অনেক পন্য পেয়ে যাবেন। প্রতিটি পন্যের উপর দারাজ সর্বোচ্চ ১২% কমিশন দেয়।

গ. বিডি শপ এফিলিয়েট প্রোগ্রাম

বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় ই-কমার্স ওয়েবসাইট হলো বিডি শপ। এখানেও আপনি অনেক পন্য পেয়ে যাবেন। বিডি শপ প্রতিটি পন্যের উপর ৩-৭% কমিশন দেয় এবং সর্বনিম্ন ৫০০০ টাকা হলে উত্তোলন করা যায়।

উক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে আমার হোস্টার সবথেকে বেশি কমিশন দেয় এবং সর্বনিম্ন উত্তোলন এর পরিমান অনেক কম। অতএব আমি আমার হোস্টার এফিলিয়েট প্রোগ্রাম রেকমেন্ড করবো।

৪. প্রডাক্ট নির্বাচন

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সবথেকে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হলো প্রডাক্ট নির্বাচন। আপনার অডিয়েন্স কোন প্রডাক্ট কিনবে তা আপনাকে আন্দাজ করতে হবে।

আপনি ব্যবহার করেছেন এমন প্রডাক্ট নিয়ে যদি পোস্ট করেন তাহলে সবথেকে ভালো হবে। কারণ আপনি সেটি ব্যবহার করেছেন অতএব তার ভালো এবং খারাপ দিক সম্পর্কে আপনি ভালো জানবেন।

বর্তমানে অনেক কোম্পানি এফিলিয়েট মার্কেটারদের প্রডাক্ট টেস্ট করার জন্য একটি কপি দেয়। তবে এক্ষেত্রে জনপ্রিয় এফিলিয়েট মার্কেটার হতে হবে।

৫. অর্গানিক অডিয়েন্স তৈরী

আপনার যদি ভালো মানের অর্গানিক অডিয়েন্স না থাকে তাহলে কখনোই সেল পাবেন না। কারন অডিয়েন্স আপনাকে বিশ্বস্ত মনে করলে তবেই পন্য কিনবে।

তাই অর্গানিক অডিয়েন্স অনেক গুরুত্বপুর্ন। আপনি ইমেইল নিউজলেটার, এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, পেইড মার্কেটিং ইত্যাদি করে অর্গানিক অডিয়েন্স পেতে পারেন।

উপরোক্ত ধাপ গুলো অনুসরণ করতে পারলে আপনি একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে উঠতে পারবেন। তবে এফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক সময় সাপেক্ষ একটি বিষয়। তাই প্রচুর ধৈর্য্য এবং ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে।

আমাদের আলোচনা আজ এই পর্যন্তই। আশাকরি আমাদের আজকের এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনাদের পছন্দ হয়েছে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য ওয়েবসাইট দরকার আবার ওয়েবসাইট তৈরী করার জন্য প্রয়োজন হোস্টিং। আমার হোস্টার বাংলাদেশের প্রথম পে এস ইউ গো হোস্টিং প্রোভাইডার। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment