কিভাবে সময় নষ্ট না করে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করবো? সিম্পেল কিছু টিপস

সাদিক ভেবেছে আজ সে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বে। কিন্তু কিছুক্ষণ পড়েই সে ভাবলো, এখন একটু বিরতি নেওয়া দরকার, অনেকতো পড়েছি। তাই, ১০ মিনিট বিরতি নিয়ে সে আবার পড়া শুরু করবে। ব্যস! বিরতির অজুহাতে সে চলে গেলো ফেসবুকের দুনিয়ায়। ওমা! কখন যে সময় ফুঁড়িয়ে মিনিটকে পিছনে ফেলে ঘন্টার কাটাকে ছুঁয়ে ফেলেছে, সে বিন্দুমাত্র টের পায়নি। আর এই গল্পটি শুধু সাদিকের নয়। আমার-আপনার মতো অনেকেরই প্রত্যেহ গল্পের একাংশ বলা চলে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজের তো অভাব নেই, ক্যারিয়ার এ ফোকাস করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা কিছু সিম্পেল টেকনিক শিখব যে কিভাবে সকল ডিস্ট্রাকশন থেকে দূরে থেকে আমরা আমাদের কাজে ফোকাস করতে পারি।

সিম্পল একটা মাইন্ডসেট। সিম্পল একটা টেকনিক মনে প্রাণে বিশ্বাস করলে। অনেক সময় সেই টেকনিক দিয়েই অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলা যায়। এই যেমন ধরো, তোমার পড়তে ভাল্লাগে না? পড়তে মন চায় না?

জাস্ট REST ফর্মুলা এপ্লাই করো। এই REST ফরমুলাটা অ্যাপ্লাই করতে ‍গিয়ে প্রথমেই REST- এর ভিতরের E- এর দিকে খেয়াল করো।

Contents

E দিয়ে Eleminate:

এই E দিয়ে বুঝায় ইলিমিনেইট (Eliminate) করে ফেলা। তাই তোমাকে কিছু জিনিস ইলিমিনেট করতে হবে। এখন তুমি চিন্তা করে দেখ– সারাদিন না পড়লেও সারাদিনের সময়টা কোন না কোনভাবে পার হয়ে যায়। হয়তো মোবাইল টিপাটিপি করতে? ফেইসবুক ঘাটাঘাটি করতে? ইউটিউবে স্ক্রলিং করতে? বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতে? নাকি ভিডিও গেমস, মুভি দেখা, খেলা দেখা, নিউজ এর পিছনে। কিসের পিছনে যায়? সেটার ছোট খাটো একটা লিস্ট বের করো।

লিস্ট হয়ে যাওয়ার পর তোমার একটা কাজ। সেটা হচ্ছে তোমার এই লিস্টের সবচেয়ে বড় তিনটা কাজ করা বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ তুমি যেসব কাজে সবচেয়ে বেশি সময় নষ্ট করছো সেগুলাকে ইলিমিনেট করতে হবে।

তুমি যদি মোবাইল খুব বেশি ইউজ করো তাহলে মোবাইলটা টার্ন অফ করে তোমার আম্মুকে তিনদিনের জন্য দিয়ে দিবে। বা তুমি যদি কিছু না করে সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকো। তাহলে এই বিছানা, কাথা, বালিশ তোমার রুম থেকে বের করে বারান্দায় বা তোমার পাশের রুমে নিয়ে রেখে আসবে। অর্থাৎ যে কাজগুলা তোমার সময় খেয়ে ফেলে, তুমি তাদেরকে খেয়ে ফেলবে।
.

S দিয়ে Specific

এই S দিয়ে বুঝায়– তোমাকে একটু স্পেসেফিক (Specific) হতে হবে। সেটা বেশি দিনের জন্য না। বা পুরা দিনের জন্য না। বরং ছোট্ট একটা সময়ের জন্য। শর্ট একটা ডিউরেশনের জন্য। কখনো চিন্তা করবে না যে এই সপ্তাহ পড়ে ফাটাইয়া ফেলবো। বা আজকে সারাদিন শুধু পড়বোই পড়বো। খাওয়া বাথরুম কিছুই করমু না। খালি পড়মুই। এইসব চিন্তা করে কোন লাভ নাই। বরং তুমি চিন্তা করবি– আমি জাস্ট এক ঘন্টা পড়মু। তার বেশি না।

আর খুব খায়েশ হলে- বড় জোড় দেড় থেকে দুই ঘন্টা। এর বেশি চিন্তাই করবে না। আর এই এক দেড় ঘন্টার মধ্যে দশটা সাবজেক্ট না। এমনকি একটা সাবজেক্টের সবকিছু না। শুধু সিম্পল, স্পেসিফিক একটা জিনিস ডিসাইড করবে। যেটা এক ঘন্টার মধ্যে আমি শেষ করবো। এক ঘন্টার মধ্যে শেষ না হলে দেড় বা দুই ঘন্টার মধ্যে শেষ করবো। এই রকম একটা ডিসিশন নিলে তোমার জন্য টার্গেটটা অনেক ছোট এবং স্পেসিফিক হয়। এবং সেটার জন্য সাহসও করা যায়। অ্যাটেম্পট নেওয়াটা ইজিয়ার হয়।

.

T দিয়ে Timebox

এই T দিয়ে বুঝায় টাইমবক্স (Timebox) । অর্থাৎ তোমাকে একটা টাইমবক্স সেট করতে হবে। ধর, সারাদিনে তুমি অনেক হাবিজাবি কাজ করো। ইউটিউবে এনজয়, নেটফ্লিক্সে বেনজয়, ভিডিও গেমসে ধনঞ্জয়, ফেইসবুকে বিশ্বজয়, হেনোতেনো। ফ্রেন্ডদের সাথে ফোনে আড্ডা, সোশ্যাল মিডিয়া। হাবিজাবি। সেগুলা কর। কোন সমস্যা নাই। শুধু সারাদিনের মধ্যে– জাস্ট দুই ঘন্টার দুইটা টাইমবক্স সেট করবে। এগুলাকে আমি বলি ডিসকানেক্টটেড বা এনালগ টাইমবক্স।

যাতে সারাদিনের মধ্যে মোট চার ঘন্টা সলিড টাইমবক্স হয়ে যায়। তুমি সারপ্রাইজড হয়ে যাবে যে অন্যসময় তুমি সারাদিনে যতটুকু পড়তা, দুই ঘন্টার দুইটা টাইমবক্সের মধ্যে তুমি তার চাইতে বেশি পড়ালেখা করে ফেলতে পারতেছো।

.

R দিয়ে Reward

এই R দিয়ে বুঝায় রিওয়ার্ড (Reward)। কারণ কী? ছোটবেলায় তোমাকে যখন তোমার আম্মু বলতো যে এই অংকটা শেষ করো বা তুমি যদি ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করো তাইলে তোমাকে আইসক্রিম দিবো। নতুন জামা কিনে দিবো। অথবা এই জিনিসটা খাইতে দিবো বা মোবাইলে খেলতে দিবো। সেই লোভে বা সেই আশায় কিন্তু তুমি সিরিয়ালসি পড়ালেখা করতে।

এখন সেই রিওয়ার্ড সিস্টেমটা তোমাকে আবার চালু করতে হবে। নিজে নিজে। ধরো, তুমি একটু পরে খাবে। তার আগে তুমি বিশ মিনিট বা ত্রিশ মিনিট এর একটা শর্ট স্পেসিফিক টার্গেট সেট করে ফেলো। আচ্ছা, আমি যদি এই কাজটা ফিনিশ করতে পারি, তাহলে তারপরে গিয়ে লাঞ্চটা বা ডিনারটা করবো।

যখন তুমি এই কাজটা শেষ করে লাঞ্চ করতে যাবে তখন ওই লাঞ্চটা তোমার কাছে একটা রিওয়ার্ড হিসেবে চলে আসবে। হয়তো তুমি খেতেই কিন্তু এখন একটু স্ট্রাটেজিক ভাবে তোমার ওই খাওয়াটা তোমার কাছে একটা রিওয়ার্ড হিসেবে আসবে।

একইভাবে তুমি হয়তো একটা জামাই কিনবে। বা ব্যাকপ্যাকই কিনবে, কিন্তু একটা কন্ডিশন দিয়ে দিলে। ঠিক আছে আমি যদি এই চ্যাপ্টারের চল্লিশটা অংক শেষ করতে পারি তাইলে আমি এই কাজের রিওয়ার্ড হিসেবে নিজেকে এই জামাটা উপহার দিবো। তারমানে তুমি উপহার দিচ্ছো বা পুরষ্কার হিসেবে পাচ্ছ। তখন ওই জিনিসটা তোমার নিজের একটু ভালো ফিল হবে। যতবার তুমি ওই জামাটা পরবে ততবার তোমার মনে হবে আচ্ছা; কেমেস্ট্রির প্রথম দশ চ্যাপ্টার রিভিশন দেয়ার রিওয়ার্ড হিসেবে আমি এই জামাটা পাইছি।

পরিশেষে

শেষ কথা হচ্ছে– তোমাকে REST ফর্মুলাই এপ্লাই করতে হবে। এমন কোন কথা নাই। তুমি চাইলে REST টেকনিককে মডিফাই করে তোমার মতো করে আরেকটা টেকনিক নিজে নিজে ডেভেলপ করে সেটা এপ্লাই করতে পারো। তবে যেই টেকনিকই এপ্লাই করো না কেন, নিজেকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বোকা বানিয়ে বলতে হবে– আমি এই পলিসি এপ্লাই করবো। এই পলিসি দিয়েই কাজ হবে। সেজন্যই হয়তো স্টিভ জবস বলে গেছেন– stay hungry stay foolish

অন্য দিকে যেকোন টেকনিক নিয়ে খুব বেশি এনালাইসিস, খুব বেশি জাস্টিফিকেশন, খুব বেশি বুদ্ধি বের করার চেষ্টা করলে সেটা কখনোই কাজ করবে না। বুদ্ধি পেঁচাইতে পেঁচাইতে গুতুম পেঁচা হয়ে যাবে। কাজের কাজ না করে এনালাইসিস করতে করতে এনালাইসিস প্যারালাইসিস হয়ে যাবে।

Leave a Comment