ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও করলে সাইটে কি প্রভাব পড়তে পারে? ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত

এস.ই.ও একটি ওয়েবসাইটের গুগল  বা অন্যান্য সার্চ ইন্জিন থেকে ভিজিটর পেতে সহায়তা করে । এস ই ও না করে কোনো ওয়েবসাইটে ভিজিটর নেওয়া প্রায় অসম্ভব । আপনি যেহেতু এই আর্টিকেল ওপেন করেছেন তাহলে আমি এইটুকু ধরেই নিতে পারি যা আপনি এস .ই.ও কি সেটা জানেন । জানার বিষয় হলো ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও আসলে কি বা কিভাবে কাজ করে । আজকে আলোচনা করব ব্ল্যাক হ্যাট এস ই ও করলে সাইটে কি প্রভাব পড়তে পারে, অর্থাৎ ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও এর প্রভাব। ব্ল্যাক হ্যাট এস ই ও কি তা সবার জানার ই কথা , না জানলে এই আর্টিকেল ওপেন করতেন না । তাই সংক্ষেপে ব্ল্যাক হ্যাট এস ই ও এর ধারনা নিব।

Contents

ব্ল্যাক হ্যাট এস ই ও

black hat seo

সার্চ ইন্জিন যেমন গুগলে, বিং প্রতিনিয়ত তাদের সার্চ ইন্জিন এলগরিদম আপডেট করছে । আর বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সার্চ ইন্জিনে পাবলিশ করা কন্টেন্ট গুলোর মধ্যে যে কন্টেন্ট তাদের এলগরিদম অনুযায়ী ভালো হবে বা এলগরিদমের শর্তগুলোর সাথে যে সকল কন্টেন্ট সবথেকে ভালো মিলবে সেই কন্টেন্ট গুলোই গুগলের বা অন্যান্য সার্চ ইন্জিনের প্রথম পেজে থাকবে ।

উদাহরন স্বরূপ এই এলগরিদমে এমন শর্ত দেওয়া আছে যে, যে সকল কন্টেন্ট এ ইমেজ গুলো ইউনিক থাকবে, কন্টেন্ট টা যে বিষয়ে নেওয়া তার সম্পর্কে বিস্তারিত থাকবে, কোনো কপিরাইট জাতীয় কিছু থাকবেনা, ব্যাকলিংক থাকবে, যে কি-ওয়ার্ডের ওপর কন্টেন্ট লেখা তা কন্টেন্ট এ কয়েকবার থাকবে, কি-ওয়ার্ড  ইমেজের ALT টেক্সট হিসাবে থাকবে এমন অনেক শর্ত লেখা থাকে এলগরিদমে ।

উদাহরনের জন্য আমি ৩ টা শর্ত ধরে নিচ্ছি-

  1.  কি-ওয়ার্ড ঐ  কন্টেন্ট এ ৫ বার বা তার বেশী থাকবে
  2. এই কন্টেন্ট সম্পর্কিত অন্যান্য যে সকল কন্টেন্ট সার্চ ইন্জিনে আছে তার সাথে লিংক থাকবে
  3. একাধিক অর্থপূর্ণ ইমেজ থাকবে ।

এখন যে সকল কন্টেন্ট গুলো এই শর্ত গুলো মেনে লেখা হবে সেগুলো সার্চ ইন্জিনের প্রথম পেজে থাকবে । কিন্তু এমন ও হতে পারে যে আমি কন্টেন্টে মেইন কি-ওয়ার্ড অনেক বার লিখলাম  এবং যিনি কন্টেন্ট পড়ছেন তার চোখে যাতে এগুলা না পড়ে  তার জন্য আমি এগুলা কোডের মাধ্যমে ইনভিজিবল করে দিলাম । সেটা চোখে দেখা না গেলেও কন্টেন্ট এর মধ্যে আছে ।

এই ভাবে আমি অনেক বার আমার কন্টেন্ট এ মেইন কি-ওয়ার্ড দিলাম। এক ই ভাবে অপ্রয়োজনীয় লিংক এ অনেক বার এড করলাম। এভাবে এলগরিদমে যা যা শর্ত উল্লেখ আছে তা প্রয়োজনহীন হলেও সব গুলো একটা কন্টেন্ট এ এড করলাম। যাতে কন্টেন্ট এর মান অনেক বাজে হলেও সার্চ ইন্জিন দেখবে কন্টেন্ট সকল শর্ত মেনে পাবলিশ করা। তখন সার্চ ইন্জিন এই কন্টেন্ট কে ভালো মানের কন্টেন্ট মনে করে পাবলিশ করবে। এই পদ্ধতি ই ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও

(যদিও খুব বেশিদিন এধরনের কন্টেন্ট র্যাংকে থাকেনা এবং সার্চ ইন্জিন দ্রুত ই এধরনের কন্টেন্ট রিমুভ করে দেয়)

বিভিন্ন ধরনের ব্লাক হ্যাট এস.ই.ও এর পদ্ধতি

ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও কি সেটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন । এখন কয়েকটি ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও এর উদাহরন দেখা যাক।

কি-ওয়ার্ড স্পাফিং

কি-ওয়ার্ড স্পাফিং বলতে বোঝায় যে কি ওয়ার্ড সম্পর্কে আমি কন্টেন্ট লিখছি  ওই মেইন কি-ওয়ার্ড ও এই কি-ওয়ার্ডের সাথে সামঞ্জস্য আরো অনেক গুলো কি-ওয়ার্ড অপ্রয়োজনীয় ভাবে কন্টেন্ট এ এড করা অনেক বেশি পরিমানে । এতে এলগরিদমের মনে হবে এই কন্টেন্ট সম্পর্কিত সকল কিছু এর মধ্যে আছে। এবং এই কন্টেন্ট কে স্বল্প সময়ের জন্য র্যাংক করে । তবে সার্চ ইন্জিন খুব দ্রুত ই তা বুঝতে পারে এবং ওয়েবসাইট এর র্যাংক অনেক কমিয়ে দেয় । এতে ওয়েবসাইটের সার্চ ইন্জিনের ডাটাবেজে বাজে সাইটের তালিকায় পড়ে যায় এবং আর এই সাইট এর কোনো কন্টেন্ট র্যাংক করেনা।

ক্লোকিং

এটি এমন একটি পদ্ধতি যাতে সার্চ ইন্জিন কে একটি কন্টেন্ট দেখানো হয় এবং ভিজিটর কে অন্য কন্টেন্ট দেখানো হয় । সার্চ ইন্জিন কে যেটা দেখানো হয় সেটি সাধারনত spuffed keywords দিয়ে ভরা থাকে।

এবং ভিজিটর কে যা দেখানো হয় সেটি সাধারনত অপটিমাইজ করা থাকে যা ইউজারের কাছে নরমাল মনে হয় । এতে সাইটের ওপর অনেক বাজে প্রভাব পড়ে এমন কি সাইট গুগল এর সার্চ লিস্ট থেকে বাদ ও হতে পারে ।

হিডেন টেক্সট এবং লিংকস

ধরুন ওয়েবসাইটের ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা। এখন এই সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপরে যদি সাদা রঙের লেখা থাকে তাহলে তা তো আর ভিজিটরের চোখে পড়বেনা ।  কন্টেন্ট এর মধ্যে লেখা গুলো হাইড করে অনেক লিংক এবং টেক্সট দেওয়ার মাধ্যমে এলগরিদম কে বোকা বানিয়ে সার্চ লিস্টের প্রথমে ওঠার একটি অন্যতম পদ্ধতি ।

অটো ব্লগিং

অটো ব্লগিং বলতে বোঝায় এমন একটি পদ্ধতি যাতে  ওয়েবসাইটে অটোমেটিক কন্টেন্ট পাবলিশ হতে থাকে কোনো একটি সোর্স থেকে বা আর্টিফিশিয়াল ভাবে জেনারেট হয় । এতে প্রাথমিক ভাবে ভিজিটর অনেক বেশী থাকে । অনেক ভালো ফলাফল ও পাওয়া যায়।

তবে পরবর্তিতে সাইটের ভিজিটর একেবারে ডাউন হয়ে যায় সাইটের সকল ইনভেস্টমেন্ট সময় নষ্টতে পরিণত হয়।

ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট

এটি ব্যবহার করা হয় ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট এর পরিমান অনেক দ্রুত বাড়ানোর জন্য। কোনো সাইটে দ্রুত অনেক বেশি কন্টেন্ট পাবলিশ হলে সার্চ ইন্জিনের ক্ষেত্রে র্যাংক ওপরের দিকে আসে । তবে তা যদি ভালো মানের কন্টেন্ট হয়। তবে এভাবে কন্টেন্ট গুলো ভালো হয়না এবং সাইটের একই পেজগুলো একাধিক বার পাবলিশ করা হয়

ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও এর প্রভাব

ব্ল্যাক হ্যাট এস ই ও কি? এর কিছু উদাহরন তো দেখলাম। এবার এর প্রভাব গুলো কি কি হতে পারে সেগুলো নিবে আলোচনা করা যাক।

র্যাংক কমে যাওয়া

তো সবার প্রথমে যেটা হতে পারে তা হলো সার্চ র্যাংক কমে যাবে । সাইটে যদি আগে থেকে কোনো কি-ওয়ার্ড বা পোস্ট র্যাংক করা থাকে তাহলে সবার আগে সেগুলা আর র্যাংকে থাকবেনা । এবং সাইটের টোটাল র্যাংকিং অনেক নিচে নেমে যাবে ।

ইউজার এক্সপেরিয়েনস

এর পর যেটা হতে পারে তা হলো এসব টেকনিক ইউজ করার কারনে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স অনেক খারাপ হবে। কোনো ভিজিটর একবার সাইটে ডুকলে যদি দেখে সে যে কন্টেন্ট চাচ্ছে বা জানতে চাচ্ছে যে বিষয়ে তা কন্টেন্ট এ নেই বরং উল্টা পাল্টা অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে ভরা তাহলে সেই ভিজিটর আর এই ওয়েবসাইটে আসবেনা । এভাবে অনেক বড় একটা ভিজিটর সাইট হারাবে।

অর্গানিক ট্রাফিক কমে আসবে

একটি ওয়েবসাইটে ভিজিটর অনেক ভাবে আসে। বিভিন্ন এড চালানোর মাধ্যমে, মার্কেটিং এর মাধ্যমে বা লিংক শেয়ারের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার ভিজিটর আসে। এসবের মধ্যে সবথেকে যে ভিজিটর গুরুত্বপূর্ণ তা হলো অর্গানিকভাবে কতটুকু ভিজিটর আসছে ।

যেসব সাইটে অর্গানিক ভিজিটর অনেক বেশী সে সকল সাইট সার্চ ইন্জিনে ও র্যাংকে থাকে এবং পরবর্তিতে অনেক ভিজিটর ও পায় ।যত ই ভিজিটর আসুক অর্গানিক ভিজিটর অনেক প্রয়োজনীয় ।

লং টার্ম এর প্রভাব

যারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট নিয়ে এর  আগে কাজ করেছেন তারা হয়তো জানে সার্চ পেনাল্টি কি, যারা জানেন না তাদের জন্য সংক্ষেপে বলি । যখন কোনো ওয়েবসাইট সার্চ পেনাল্টি এর শিকার হয় তখন তার কোনো কন্টেন্ট আর সার্চ ইন্জিনের সার্চ এ সো করেনা । সোজা কথায় বললে সাইট টি সার্চ ইন্জিন থেকে ব্লক/ব্যান হয়ে যায়

নেগেটিভ ইউজার রিভিউ

এটি হয়তো খুব বেশী ব্যাখ্যা করা লাগবেনা । ইউজার রিভিউ নেগেটিভ হলে কি হতে পারে আপনি আশা করি জানেন । যদি আপনার কোনো ব্যাবসায়িক বা প্রফিটেবল ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনার ইউজার রিভিউ খারাপ হলে আপনার এই সাইট থেকে রেভিনিউ জেনারেট করা প্রায় অসম্ভব হবে ।

পরিশেষে

ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ের জন্য সাইটের র্যাংক বাড়লেও পরবর্তিতে সাইটের অনেক বড় ক্ষতি হয় এতে । প্রাথমিক ভাবে এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে ভবিষ্যতে সাইটের ভিজিটর একদম ০ তে নেমে আসে।

এক কথায় বলা যায় ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও একটি আন-এথিক্যাল পদ্ধতি এবং ব্ল্যাক হ্যাট এস.ই.ও এর প্রভাব আপনার অনেক দিনের পরিশ্রম এক নিমেষে সময় নষ্টের নাম দিয়ে দিতে পারে। সার্চ ইন্জিন এলগরিদম এখন অনেক উন্নত এবং এধরনের টেকনিকে বেশি সময়  পর্যন্ত টিকে থাকা সম্ভব নয় । তাই এসকল দিক পরিহার করে ভালোভাবে কাজ করলে সফলতা ইনশাল্লাহ পাবেন। এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে আমারউইকি এর সাথেই থাকুন।

আরো দেখুন

ব্লগিং এর কিছু বড় ভুল, যা বেশীরভাগ বিগিনার্সরাই করে থাকে : Lessons from Experienced Bloggers

কিভাবে Internal Server Error Problem of WordPress ফিক্স করবেন? ওয়ার্ডপ্রেস এর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান – 01

Leave a Comment