বর্তমানে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, যেমন ইউটুব, ফেসবুক এগুলা চলে এসেছে । ভিডিও কন্টেন্ট এর যুগ এখন । তবে এর মধ্যে ব্লগিং এখনো হারিয়ে যায় নি। ২০১১ -২০১৬/১৭ পর্যন্ত ব্লগিং অনেক জনপ্রিয় ছিল বাংলাদেশে । তখনকার যুগে এমন ভিডিও কন্টেন্ট এতোটা জনপ্রিয় ছিল না যতোটা এখন করোনার পরে হয়েছে ।
তবে ব্লগিং এর দিন কি শেষ? না, মানুষ এখনো ব্লগ পড়ে তবে আগের মতো এতোটা না । গুগল থেকে পাওয়া বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মানুষ এখনো সপ্তাহে ১ বার হলেও গুগলে সার্চ করে কোনো না কোনো ব্লগে যায় । আর এখনো ব্লগার রা তাদের ব্লগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, এডসেন্স এর মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করছে । আবার অনেকে নতুন করে শুরু করতে চাচ্ছে । তো যারা নতুন করে শুরু করে তারা প্রায় ই কিছু কমন ভুল করে থাকে । আজকে আর্টিকেলে আমরা সেই কমন ভুল গুলা নিয়ে কথা বলবো যাতে সেই ভুল আপনি আর না করেন ।
তো চলুন শুরু করা যাক।
Contents
ব্লগিং নিশ
নিশ কি সেটা আমরা সকলেই জানি । তো এখন প্রশ্ন আসতে পারে এখানে ভুল কোথায়, ভুল হচ্ছে নিশ চুজ করার ক্ষেত্রে । ব্লগিং এর অনেক নিশ রয়েছে, লাইফ স্টাইল, রান্নার রেসিপি অনেক ধরনের নিশ রয়েছে । তবে ভিডিও কন্টেন্ট বেশী জনপ্রিয় হওয়ায় বর্তমানে অনেক ধরনের নিশে কাজ করে এখন ব্লগিং এ আর সফল হওয়া যায় না ।
যেমন ধরুন আগে লাইফস্টাইল নিশ ছিল, তখন অনেকে তাদের প্রতিদিনের বিভিন্ন ইন্ট্রেস্টিং বিষয়ের ওপর ব্লগ লিখতো । আবার অনেক ট্রাভেলার ছিল, যারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে সেখানে কি কি দেখলো, মানে ওই জায়গা সম্পর্কে ব্লগ লিখতো । আবার অনেকে ছিল বিভিন্ন রান্নার রেসিপি লিখতো । তখন মানুষ কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে একবার গুগলে সার্চ দিয়ে সেই ব্লগ গুলো পড়তো, বা রান্নার করার আগে গুগলে সেই রেসিপি গুলো পড়তো । তবে বর্তমানে ভিডিও কন্টেন্ট এর যুগে সেগুলা আর চলেনা । মানুষ এখন ইউটুবে দেখে ট্রাভেল ভ্লগ । রান্নার রেসিপি গুলাউ এখন আর কেউ গুগলে সার্চ না করে ইউটুবে করে ।
এমন অনেক নিশ আছে যেগুলা এখন আর ব্লগিং এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । এই নিশ গুলা নিয়ে কাজ না করাই ভালো, এমন না যে এগুলা নিয়ে কাজ করলে সফল হওয়ার চান্স নেই একদম তবে এগুলা নিয়ে কাজ না করায় ভালো । তাই ব্লগিং শুরু করার আগে নিশ সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করে নিতে হবে ।
প্রোপার প্লানিং এবং রিসার্চের অভাব
নতুন ব্লগার দের সবথেকে বড় ভুল হয় এখানেই । একটি ব্লগ শুরু করার আগেই ফুল প্লানিং করে নিতে হয় । তবে বর্তমানে বেশির ভাল ব্লগার এই জিনিস টাই বুঝে না। চলুন একটা উদাহরনের সাহায্যে বুঝি এই প্রোপার প্লানিং টা আসলে কি ।
কন্টেন্ট প্লানিং
ধরুন আপনি একটা নতুন ব্লগ শুরু করবেন । তো সবার আগে নিশ রিসার্চ করতে হবে যেটা একটু আগে বললাম । তারপর কি করনীয়? আপনি যে নিশে কাজ করতে চায় ওই নিশ এর মধ্যে অনেক গুলা কি ওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে যেগুলা সার্চ ভলিউম বেশী তবে কম্পিটিশন তুলনামুলক কম । তবে এখন ই কেনো রিসার্চ করব এটা প্রশ্ন আসতে পারে, কারন ব্লগ তো শুরুই হয়নি ।
আগে থেকে প্লানিং করে নেওয়া টাই ভালো । এক্ষেত্রে আমার মতে ব্লগিং শুরু করার আগেই কমপক্ষে ৩০ টা মতো এমন কি ওয়ার্ড রিসার্চ করে রাখা ভালো । এখন আপনার কাছে ৩০ টা কি ওয়ার্ড আছে । এবার আপনি ডেট ওয়াইজ সাজিয়ে পুরো এক/দুই মাসের একটা কন্টেন্ট প্লান বানান। হতে পারে সেটা গুগলে ক্যালেন্ডারে বা অন্য কোথাও । এই কি-ওয়ার্ড গুলা নিয়ে আপনি যে কন্টেন্ট লিখবেন তার টাইটেল বানান এবং কোন ডেট এ কোন আর্টিকেল নিয়ে লিখবেন সেটা ঠিক করে নিন । তবে মনে রাখবেন সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ টি কন্টেন্ট দিতেই হবে নতুন ব্লগে । নইলে নতুন ব্লগের জন্য র্যাংক করা কঠিন হয়ে যাবে ।
ব্যাকলিংক প্লানিং
তো এখন আপনার কাছে প্রোপার প্লান আছে যে কবে কখন কিসের ওপর আপনি কন্টেন্ট লিখবেন । এবার আপনার রিসার্চ করতে হবে ব্যাকলিংক এর জন্য । নতুন ব্লগের জন্য ব্যাকলিংক আবশ্যক ব্যাকলিংক ছাড়া কোনো ব্লগ র্যাংক করতে পারবেনা । তো কন্টেন্ট প্লানিং শেষে এবার আপনি রিসার্চ করবেন আপনি যা নিশ নিয়ে কাজ করছেন ওই একই নিশে আর কোন কোন সাইট আছে, এর মধ্যে ব্যাকলিংক নিতে পারবেন কোন সাইট গুলো থেকে, কোন সাইট গুলাতে গেস্ট পোস্টিং এর সুযোগ আছে । এসব দিক বিবেচনা করে আপনি ব্যাকলিংক এর একট প্রোপার প্লানিং করুন । পুরো একমাসের একটা ব্যাকলিংক প্লান রাখুন ওভাবে। এটা আপনি গুগল সিট এ করতে পারেন । কোন সাইটে এ ব্যাকলিংক এর সুযোগ আছে কোন ধরনের ব্যাকলিংক নেওয়া যাবে এবং সাইটের লিংক সহ একটা লিস্ট করুন ।
আমি জাস্ট একটা উদাহরন বললাম যে কিভাবে প্লানিং গুলা করতে পারেন । এবার আপনি সব দিক বিবেচনা করে (সব দিক বলতে SEO, Content writing, marketing etc.) একটা প্লানিং করবেন যা সপ্তাহ খানেক সময় লাগতে পারে। কি ওয়ার্ড রিসার্চ করাও এতো সহজ না.. সময় তো লাগবেই
এবার সব প্লানিং শেষ হলে প্লান অনুযায়ী প্রতিদিন লিখতে থাকবেন।
মনিটাইজেশনের চিন্তা
নতুন ব্লগার দের সবথেকে বড় যে চিন্তা থাকে সেইটা হলো ব্লগিং শুরু করার আগে মনিটাইজেশন করার । তাদের ধারনা থাকে যে মনিটাইজেশন করলেই ইনকাম শুরু হবে । তবে আসলে তা হয়না।
মনিটাইজেশন বা এদসেন্স বা অন্য কোনো এড নেট ওয়ার্কে এপ্লাই করার আগে নিজের সাইটের একটা এক্টিভ ভিজিটর থাকা লাগবে । এক্টিভ ভিজিটর না থাকলে কোনো লাভ হবেনা । আর বাংলাদেশের সিপিসি এর যা অবস্থা থাকে তাতে সাইটে প্রতিদিন ১/২ হাজার ভিজিটর না আসা পর্যন্ত ওয়েবসাইট মনিটাইজ করা উচিত নয় । এতে ফলাফল আসবে আপনার সব পরিশ্রম শূণ্য
ব্যাপার টা এমন যে আপনার সাইটে যদি ১০০/২০০ ভিজিটর থাকে প্রতিদিন তাহলে আপনার এডসেন্স এপ্রুভ হতে পারে । তবে এতে আপনি তেমন ইনকাম হবেনা । আর যখন গুগল দেখবে আপনার সাইট থেকে তাদের কোনো প্রফিট হচ্ছে না, তখন প্রথম যে কাজ টা করবে সেটা হলো এড লিমিট দিবে, তারপর এডসেন্স সাসপেন্ড ও করে দিতে পারে । তখন আপনার সব পরিশ্রম বেকার যাবে ।
তাই প্রতিদিন ১হাজার ভিজিটর নিশ্চিত না হয়ে আমার মতে এডসেন্স এ এপ্লাই করা উচিত হবেনা ।
পরিশেষে
ব্লগিং এর সব থেকে কমন ৩ টি ভুল যার কারনে বেশীরভাগ মানুষ ব্লগিং ছেড়ে দেয় তা নিয়ে কথা বললাম । আপনার কাছে বিষয়গুলি কেমন লাগলো, ভুল ত্রুটি বা অন্য কোনো মতামত থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না । ব্লগিং ১/২ মাসের জন্য নয়, দীর্ঘদিন এর পিছনে সময় দিলে পরে এর থেকে বিপুল পরিমান রেভিনিউ জেনারেট করতে পারবেন । তবে তার জন্য সময় দিতে হবে ।
আপনি লেগে থাকুন, স্মার্টভাবে হার্ড ওয়ার্ক করলে সফলতা অবশ্যই পাবেন।
Happy blogging!