কন্টেন্ট রাইটিং এর বাস্তব একটি অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।

আমি ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত তিনটা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে এমন কোম্পানিতে কন্টেন্ট রাইটিং এ জব করেছি। যদিও এখন আমি ট্র্যাক বদল করে ফেলেছি। এই অল্প একটু অভিজ্ঞতায় আমি কিছু ব্যাপার শেয়ার করার চেষ্টা করবো, আশা করি কাজে লাগবে। তবে প্রথমেই বলে রাখি আমি এই লেখাটি খুব একটা সাজিয়ে গুছিয়ে লিখছিনা, শুধু নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।

Contents

লেখালেখির শুরু

আমি তখন অনলাইনের এই কাজের জগতে নতুন। তবে আগে থেকে গল্প লেখার অভিজ্ঞতা ছিল। বিভিন্ন কোম্পানিতে ইমেইল করছি কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজের জন্য। এমন সময় আমি এক জায়গায় কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে জুম কলে একটি ছোট সাক্ষাতকারের জন্য ডাক পেলাম। তখন এই ব্যাপারটা সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারনা ছিল না। আমাকে রিসার্চ করে বায়োপোলার ডিসঅর্ডার সম্পর্কে লিখতে দেওয়া হল। আর আমিও চাকরীটা শুরু করলাম খুবই কম বেতনে।

লেখার মান ভালো করলাম কিভাবে?

আমাকে অমানুষিক পরিশ্রম করানো হতো, আর সেই তুলনায় খুবই হাস্যকর বেতন দেওয়া হত। তখন বুঝতাম না এখন বেশ বুঝতে পারি। সে যাই হোক। আমি যখন কাজটা শুরু করি আমি কিচ্ছু জানতাম না। আমার কোনও ট্রেইনার ছিল না। সেই কোম্পানিতে কন্টেন্ট রাইটার ছিলাম আমি একাই। দ্বিতীয় দিন থেকে টপিক দিয়ে দেওয়া হতো আর আমি লিখতে থাকতাম। প্রচুর লিখতাম, প্রচুর মানে প্রচুর। প্রতিদিন ৪০০০ হাজার গড়ে লিখতাম। আসলে লিখাতো। আমাকে বলত একজন ভাল কন্টেন্ট রাইটার দিনে এরচেয়ে বেশী লিখে।আমিও নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চেষ্টা করতাম। এভাবেই লিখতে লিখতে আর পড়তে পড়তে মাস ছয়েক পর আমি কিছুটা জাতের কন্টেন্ট রাইটার হয়ে উঠলাম।

কন্টেন্ট রাইটিং এর অভিজ্ঞতা

আপনি ভাল কন্টেন্ট রাইটার হতে গেলে প্রথমত আপনার লিখার আগ্রহ থাকতে হবে আর প্রচুর পড়তে হবে। যত পড়বেন তত বেশী ভাল লেখক হয়ে উঠতে পারবেন।এর বিকল্প নেই।তবে আপনি যদি কন্টেন্ট রাইটিং কে সাহিত্য মনে করেন, আর লাফ দিয়ে আসেন, যে হ্যাঁ কন্টেন্ট লিখবো, এটাই আমার স্বপ্ন! তাহলে, একটু দাঁড়ান। এখানে আপনার সাহিত্যিক কিংবা কবি মনকে খুব একটা গোনায় ধরা হবে না। একটা সূচনা আপনি হয়তো মনের মাধুরী মিশিয়ে চমৎকার লিখেছেন, এরা সেটাকে নির্দয়ের মতো ফেলে দিতে পারে! তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গুগলে র‍্যাংক করা। আপনার সাহিত্য তাদের কাছে ম্যাটার করে না।তবে হ্যাঁ কন্টেন্ট অনেক ধরনের হয়। ধরুন আপনি একটা সাহিত্য সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের জন্য লিখবেন, সেক্ষেত্রে আপনি সাহিত্য বিষয়ক টপিকই পাবেন।

আগেই বলেছি কন্টেন্ট অনেক ধরনের হয়। আর অনেকভাবে লিখা যায়। যেমন আপনি নিজের একটা ব্লগে নিজের জন্য লিখতে পারেন। তখন আপনি আপনার ইচ্ছেমত করবেন। কিন্তু যখন আপনি অন্যের জন্য কাজ করবেন, তখন তার হিসেব মতো এবং চাহিদা বিবেচনা করে লিখতে হবে। এটা অনেক সময় বিরক্তিকর মনে হতে পারে। আমি বিরক্ত বোধ করেই ছেড়ে দিয়েছি।প্রোডাক্ট রিভিউ করতে করতে আমি এত চরম বিরক্ত হয়েছিলাম যে পরে আমাকে যাই দেওয়া হতো আর লিখতে ভাল লাগতো না।

এই যে  ব্লগে লিখি, অনেক লিখি, কেন? কারণ আমার লিখার ব্যাপারে আমি স্বাধীন। এই প্রশ্নের উত্তরে আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। যদি এটা অন্যের জন্য লিখা হতো তবে আমাকে একটা কীওয়ার্ড সহকারে সূচনা লিখতে হতো, একটা সাব হেডিং দিতে হতো, কতগুলো পয়েন্ট করতে হতো এবং শেষে একটা উপসংহার দিতে হতো ক্লাইন্টের ইচ্ছা অনুযায়ী। কন্টেন্ট লিখা এমন একটা ব্যাপার, আপনি একে ভালবাসলেও, অন্যের জন্য ক্ষ্যাপ দিতে আপনার সবসময় ভাল নাও লাগতে পারে।

তাই আমার অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মতামত বলছি, অন্যে কেউ হয়তো ভিন্নভাবে ভাবতে পারে। কন্টেন্ট রাইটিং যতটা আনন্দের এবং হ্যাপেনিং মনে হয় ততটা না। তবে ফাইভারে কিছু রাইটার আছে যারা ১০০০ ওয়ার্ড লিখে ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার নেয়। তাদের জন্য ব্যাপারটা হ্যাপেনিং বটে! কিন্তু সবাই তো তা পায় না! এমনকি ১০০০ ওয়ার্ডের জন্য ১০ ডলার পাওয়াই বাংলাদেশ থেকে অনেককিছু। তবে আপনি যদি ওই লেভেলে যেতে পারেন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে তবে আপনার কাছেও ব্যাপারটা হ্যাপেনিং লাগবে। আমি যদি দুই ঘণ্টা কাজ করে ১০০ ডলারও কামাতাম প্রতিদিন আমার কাছে এটা হ্যাপেনিং তো লাগতোই। আমি মার্কেটপ্লেসে কাজ করি নি। তাই অভিজ্ঞতাটা বলতে পারছি না। একবার ফাইভারে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কিছুদিন পর হাল ছেড়ে গিগ মুছে দিয়েছি। তবে পেমেন্ট ভাল হলে আমি হয়ত মনের সুখে লোহা লক্করের রিভিউ লিখে যেতাম।

যাই হোক মূলত যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে, আপনার জানা উচিত যে কাজটা ক্ষেত্র বিশেষে ভয়ানক বিরক্তিকর। আপনাকে তাই নিজের মত একটা রাস্তা করে রাখতে হবে যেন আপনি আপনার বিরক্তি ট্যাকেল দিতে পারেন। আর না হয় আমার মতো অভিজ্ঞতা অর্জন করে এরপর ছেড়ে দিয়ে মুসিবতে পড়বেন।

বাংলাদেশে ঠকানোর মানুষ এই সেক্টরে প্রচুর। সাবধানে কাজ করবেন। আপনি সারাদিন খেটে একটা তিন হাজার শব্দের কন্টেন্ট লিখে যদি পেমেন্ট না পান, মনে হবে বোমা মেরে পৃথিবী উল্টায় ফেলি।

আমি বোধহয় এই লেখায় ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছি না। যেটা মনে আসছে সেটাই লিখে দিচ্ছি। যাই হোক একজন কন্টেন্ট রাইটারের অবশ্যই উচিত একটা ব্লগ করে রাখা। আপনার স্যাম্পল দেখতে চাবে আপনার ক্লাইন্ট। সেক্ষেত্রে আপনার নিজের একটা ব্লগ থাকলে লিংকটা দিয়ে দেবেন। ঝামেলা শেষ।

ব্লগার

আর হ্যাঁ আপনি যদি কন্টেন্ট রাইটিং শুরু করতে চান, তবে ব্লগিং একটা চমৎকার জায়গা। ব্লগারে একটা ফ্রি ব্লগ করে ফেলুন। আপনার জানা একটা সাবজেক্ট সিলেক্ট করুন। ৩০টা টাইটেল ঠিক করুণ। ৩০ দিনে ৩০টা কন্টেন্ট লিখুন ভালমতো রিসার্চ করে। এবার প্রথম কন্টেন্টের সাথে ৩০ নাম্বার কন্টেন্ট মিলান। ম্যাজিক, আপনি কন্টেন্ট রাইটার হয়ে গিয়েছেন। ৩০ টা কন্টেন্ট লিখতে আপনার ৩০০টা কন্টেন্ট পড়তে হয়েছে! আর আপনি খুব সহজেই হয়ে উঠেছেন একজন চমৎকার কন্টেন্ট রাইটার।এখন যত দিন যাবে, আপনি যত পড়বেন আর লিখবেন তত ভাল হয়ে উঠবেন। কাজ পাওয়ার জন্য আপনি অনেক ফেসবুক গ্রুপ পাবেন। সেখানে নিয়মিত চেষ্টা করতে থাকুন। আপনার ব্লগেও লিখতে থাকুন। এই ব্লগের মাধ্যমেও অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে টাকা আসতে পারে। এছাড়া এটা আপনার আইডেন্টিটি।

কন্টেন্ট লেখা

আবার আসি লেখার ব্যাপারে। আপনাকে কীওয়ার্ড সম্পর্কে আর তার ব্যবহার সম্পর্কে কিছুটা ধারনা অর্জন করতে হবে। খুব কঠিন কিছু না। একটু সার্চ করলে সহজেই শিখে ফেলতে পারবেন। সাধারণত একটা ওয়েবসাইটে আমরা বিভিন্ন আর্টিকেল ওপেন করি একটু স্কিমিং করি এরপর আরেকটা সাইটে চলে যাই।পুরোটা পড়ি তখনই যখন আমাকে সূচনায় তেমন কিছু দেওয়া হবে। তাই শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর দশ সেকেন্ডে একজন পাঠক সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি আগে বাড়বেন নাকি অন্য সাইটে যাবেন। ভাষাটা সহজ এবং সাজানো হলে ভাল হয়। আর চেষ্টা থাকতে হবে প্রথম অনুচ্ছেদে পাঠককে আটকে ফেলার।এছাড়া আপনি যদি ক্লাইন্টের জন্য লিখে থাকেন সেক্ষেত্রে তার নির্দেশনা থাকবে।

তবে আসুন আপনাকে একটা ফরমেট দেই। নতুন হয়ে থাকলে এভাবে আপনার ব্লগে লিখে প্র্যাকটিস করতে পারেন।

প্রথম অংশ- সূচনা: ১/২/৩ প্যারাগ্রাফে হতে পারে।প্রতিটা প্যারাগ্রাফে তিন/চার লাইন। সব মিলিয়ে সূচনাটা রাখতে চেষ্টা করুণ ১০০ বা ২০০ শব্দের মধ্যে। আর আপনার টাইটেলটা প্রথম অনুচ্ছেদে ব্যবহারের চেষ্টা করুণ।যদি কীওয়ার্ড বুঝে থাকেন তবে কীওয়ার্ডটা ব্যবহারের চেষ্টা করুণ। আপনার টাইটেলই যদি কীওয়ার্ড হয়ে থাকে তবে টাইটেল ব্যবহার করলেই হচ্ছে।

দ্বিতীয় অংশ- একটা সাবটাইটেলঃ ১/২ প্যারাগ্রাফে ১০০/১৫০ শব্দ লিখতে পারেন। একবার কীওয়ার্ড ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারেন। এই অংশটা হচ্ছে মূল আলোচনা শুরুর আগের অংশ। অর্থাৎ এরপর আপনি মূল আলোচনায় যাবেন।

এবার মূল আলোচনা: এখানে কয়েকটা পয়েন্ট আর টাইটেল করে আলোচনা করতে পারেন। সাধারণত ক্লাইন্টরা এমনই চায়। ধরুন এখানে ৫ টা পয়েন্ট দিলেন।এবার শুরু করতে পারেন বিস্তারিত আলোচনা। পাঁচটা পয়েন্টে আপনি যত ইচ্ছা লিখুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন অনুচ্ছেদে ভাগ করে লিখতে চেষ্টা করবেন। ধরুন আপনার প্রথম পয়েন্টে আপনি লিখবেন ৫০০ শব্দ। সেক্ষেত্রে ৫টা অনুচ্ছেদে বিভক্ত করে লেখার চেষ্টা করুণ। ছোট ছোট অনুচ্ছেদ এবং বাক্য পড়তে সুবিধা হয় পাঠকের।

শেষ অংশ: এখানে আপনি ১০০ থেকে ৩০০ শব্দের মধ্যে ১ থেকে ৩ অনুচ্ছেদে এতক্ষণের আলোচনার প্রেক্ষিতে একটা উপসংহার দিতে পারেন।চেষ্টা করবেন এখানেও কীওয়ার্ড ব্যবহার করার একবার।

আপনি চাইলে ফরমেট আপনার মত করে সাজিয়ে নিতে পারেন। আমি একটা দিয়ে দিলাম এর সাথে আপনি যোগ-বিয়োগ করে নিতে পারেন। তবে প্যারাগ্রাফ করে পয়েন্ট করে প্র্যাকটিস করুণ। আশা করি ৩০ নাম্বার কন্টেন্ট লিখার পড় আপনি নিজেই পরিবর্তনটা ধরতে পারবেন।

এখানে শুধু কন্টেন্ট রাইটিং এর অভিজ্ঞতার মাঝে সামান্য লেখার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা হয়েছে, বিস্তারিত জানতে চাইলে এইটা পড়ুন –

ভালো আর্টিকেল লেখার জন্য যে জিনিস গুলো আপনার মাথায় রাখা প্রয়োজন, কিভাবে একটি ভালো আর্টিকেল লেখা যায়। The Best Practices for Writing Great Content

Leave a Comment