শিক্ষার্থী হওয়ার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করার কিছু উৎস কী কী?

Contents

কোন স্কিল ছাড়াই ইনকাম

আপনি যদি বাংলায় কথা বলতে পারেন। তাহলেই আর বেশি কিছু লাগবে না। বইমেলা, বাণিজ্যমেলা, ট্যাক্স মেলা, ট্যুর মেলা, ফার্নিচার মেলা, বিবাহ মেলা, গামছা মেলা, কুতকুত মেলা, গোলআলু মেলা ফিজিক্যাল মেলা, ভার্চুয়াল মেলা। এইরকম একটার পর একটা মেলা লেগেই থাকে। আপনি জাস্ট তিন দিন সময় নিয়ে একটা মেলাকে টার্গেট করবেন। সেই মেলার সব স্টলে গিয়ে গিয়ে তাদের জানাবেন,আপনি সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হতে আগ্রহী। তারপর আপনার ফোন নাম্বারটা দিয়ে আসবেন। প্রথম দিন যে স্টলগুলোতে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয় দিনও তাদের কাছে যাবেন। তৃতীয় দিনও যাবেন। তখন একটা না একটা স্টলে দেখা হবে আগের কেউ একজন আসতে পারতেছে না। ব্যস, তারা আপনাকে হায়ার করে ফেলবে। তারপর সেখানে রেগুলার কাজ করতে থাকবেন। ভালো কাজ করলে ফিউচারে ওদের অন্য কোন মেলা আসলে আপনাকে ডাকবে।

এছাড়াও জাস্ট কথা বলা দিয়ে আপনি বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পরীক্ষার গার্ড হতে পারবে। অনেক কল সেন্টার আছে সেগুলাতে কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ হতে পারবে।

বাংলা লিখতে পারলেও ইনকাম করার অপশনের অভাব নাই। ইংরেজি বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের খবর বাংলাতে ট্রান্সলেট করে ইনকাম করতে পারবেন। বিভিন্ন কোম্পানির জন্য তাদের ওয়েবসাইট এ ব্লগ লিখতে পারবেন। বিভিন্ন কোম্পানির সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের জন্য পোস্ট লিখতে পারবেন। পত্রিকা বা নিউজ পেপারে লিখতে পারবেন। আরো ভালো লিখতে পারলে অনেক বইয়ের প্রকাশনা আছে যারা ইংরেজি বইয়ের বাংলা অনুবাদ করে। সেই কাজগুলো করতে পারবে। সো, বাংলা লিখতে পারলে কাজের অভাব নাই।

আর আপনি যদি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন তাহলে তো কেল্লা ফতে। ইন্টারন্যাশনাল কারো পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে যেতে পারবেন। ইংরেজিতে অডিও বুক বানাতে পারবেন। বিদেশী কলসেন্টারে কাজ করতে পারবেন । ইংরেজি আর্টিকেল লিখতে পারলে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কনটেন্টে রাইটিং এর কাজ করতে পারবেন।  ইউটিউব ভিডিও এর ট্রান্সক্রিপ্ট লেখে দেয়ার কাজ করতে পারবেন। সো, কাজের অভাব হবে না।

পড়াশুনা দিয়ে ইনকাম:

স্টুডেন্ট লাইফে ইনকাম করার সবচেয়ে সহজ ও কমন উপায় হচ্ছে টিউশনি করা। পারলে ইন্টারমিডিয়েট এর স্টুডেন্ট পড়াবেন। না পারলে নাইন-টেন বা আরও নিচের ক্লাসের স্টুডেন্টদের পড়াবেন। আবার ইদানিংকালে বাসায় না গিয়েও জুম বা গুগল মিট এ পড়াতে পারেন। এছাড়াও চাইলে কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতে পারবেন। ক্লাস নিতে না পারলে কোচিং সেন্টারে পরীক্ষার খাতার মার্কিং করে টাকা কামাতে পারেন। কোচিং সেন্টারের লেকচার শিট তৈরি করে দিতে পারেন।

ফ্যাকাল্টিদের কাছে অনেক রিসার্চ বা ডাটা কালেকশনের কাজ আসে সেগুলা করতে পারবেন। নোট বানিয়ে সেটা জুনিয়র বা স্কুল কলেজের পোলাপানদের কাছে বিক্রি করেও ইনকাম করতে পারবেন। আরো কত কি!

স্কিল ডেভেলপ করে ইনকাম:

আপনার কাছে যদি ছয়মাস থেকে এক বছর সময় থাকে। তাহলে আমি বলবো আপনি ছোটখাটো একটা স্কিল ডেভেলপ করুন। সেটা হতে পারে ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, প্রেজেন্টেশন তৈরি, এনিমেশন, থ্রি ডি মডেল, কার্টুন আঁকা। এই রকম কোন একটা স্কিল ডেভেলপ করতে পারেন। তারপর এই টাইপের কাজ আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে বা বিভিন্ন গরূপে পাবলিশ করবেন। করতে করতে আপনার স্কিল বাড়বে এবং এক সময় দেখবেন আপনার সেইসব কাজ এর জন্যই লোকজন নক দিচ্ছে। তখন সেই কাজ করেই আপনি টাকা কামাইতে পারবে।

বিজনেসের করে ইনকাম

আপনি যে ক্যাম্পাসে থাকেন, তার আশপাশে হাজার হাজার স্টুডেন্ট আছে। এই হাজার হাজার স্টুডেন্ট থাকার মানে কিন্তু হাজার হাজার কাস্টমার আপনার আশেপাশে আছে। এদের সবারই কিছু না কিছু জিনিসের প্রয়োজন হয়। যেমন ধরুন, কোনো একটা ইভেন্টের জন্য টি শার্ট দরকার। এসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য প্রিন্ট করা দরকার। ইভেন্টের জন্য পোস্টার ডিজাইন করা। ইভেন্টে খাবার সাপ্লাই দেয়া। এছাড়াও এরা সবাই বইখাতা কিনে। মোবাইল কিনে। কম্পিউটার কিনে। জামা কাপড় কিনে। চিন্তা করে দেখছো এইখানে কত কি বিজনেস করার উপায় আছে?

কেউ যদি বিজনেস করতে চায় তাকে যে ক্যাম্পাসে বিজনেস করতে হবে এমন কোন কথা নাই। বরং ক্যাম্পাসের বাইরের কাস্টমারদের জন্যও বিজনেস শুরু করতে পারবে। বিজনেস স্টার্ট করার মোক্ষম সময় হচ্ছে স্টুডেন্ট লাইফ। কারণ তখন আপনার খরচ কম। বাবা-মাকেও টাকা দিতে হচ্ছে না। যার সাথে ইটিশপিটিশ চলছে, সেও খোঁচা দিচ্ছে না।🤣

স্মার্ট বা ক্রিয়েটিভ উপায়ে আর্নিং

বিজনেস কম্পিটিশন করে টাকা কামানো যায়। জাস্ট বছরে ২ কম্পিটিশন করলে ভালো শো-অফ হয়। টাকা কামানোও হয়। এছাড়া ভিডিও গেম্স্ এর কম্পিটিশিন। ভিডিও গেম্স্ এর স্ট্রিমিং, ইউটিউবিং করে অনেকেই ভালো ইনকাম করে। আরেকটু স্মার্টলি ইনকাম করতে চাইলে এফিলিয়েট মার্কেটিং (কমিশন বেইজড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ) হতে পারেন। তাছাড়া পেইড প্রোডাক্ট রিভিউ, ড্রপ শিপিং, বিভিন্ন কোম্পানির ক্যাম্পাস ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েও টাকা কামানো যায়।

কিভাবে শুরু করবো?

তবে যেভাবেই টাকা কামাতে যান না কেন। অন্য কেউ এসে আপনাকে গিলিয়ে খাইয়ে দিবে না। প্রথম দিনই কারি কারি টাকা উড়ে এসে উতরে পড়বে না। তাই আপনাকে বিভিন্ন জিনিস বিভিন্নভাবে খুঁজে বের করতে হবে। মানুষের কাছে ধর্ণা দিতে হবে। অনেকেই হেল্প করবে না। না করে দিবে। চাইলে তোমাকে একটা কানেকশন দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু দিবে না। এসব ক্ষেত্রে আপনাকে নিজে গিয়ে গিয়ে বের করতে হবে। লেগে থাকতে হবে। একভাবে না হলে অন্যভাবে ট্রাই করতে হবে। তাহলে একটা না একটা রাস্তা অবশ্যই খুলে যাবে।

পরিশেষে

স্টুডেন্ট লাইফ এ ইনকাম করার রাস্তা বের করার জন্য সুপার ক্রিয়েটিভ হতে হবে এমন কোন কথা নাই। জাস্ট একটু চোখ কান খোলা রাখা লাগবে। দেখবেন আপনার আশেপাশে যারা আছে তারা কিভাবে টাকা কামাই করতেছে। আপনি আর কিছু না পারলেও ওদের মতো করে শুরু করে দিবেন। তাহলেই আপনার টাকা কমানোর রাস্তা খুলে যাবে।

Leave a Comment